নেতুরা গ্রামের ভাদু পূজা - অমিত গিরি
নেতুরা গ্রামের ভাদু পূজাঅমিত গিরি
পুরুলিয়া,
বাঁকুড়া, মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম প্রভৃতি স্থানের গ্রামাঞ্চলের মানুষের মধ্যে এখনও লোকসংস্কৃতির
ধারা বর্তমান। বাঙালি জনসাধারণের মনকে আমোদ-প্রমোদে ভরিয়ে তোলার চিরায়ত প্রথা থেকে
লোকসংস্কৃতির সৃষ্টি। এই লোকসংস্কৃতির মধ্যে ভাদু পূজা একটি লৌকিক দেবীর পূজা। আগেকার
মানুষদের কাছ থেকে জানা যায়, ভাদু হল একটি রাজার মেয়ে। এ নাকি সাধারণ গরিব দুঃখীদের
কৃপা করত। গ্রামাঞ্চলের মানুষেরা তাই এর পূজা করে। এই পূজা ভাদ্র মাসে হয়। এটি হল মূর্তি
পূজা।
নেতুরা
হল ঝাড়গ্রাম থানার অন্তর্গত। এই গ্রামে ভাদু পূজা হয়। বেশিরভাগ গ্রামের প্রত্যেকটি
পাড়ায় ভাদু পূজা হয়। চিটে মাটি দিয়ে একটি মূর্তি তৈরি করা হয়। আর তা নানা রঙের কাগজ
দিয়ে সাজানো। মেয়েরা এই পূজায় অংশগ্রহণ করে থাকে। পুরো ভাদ্র মাস ধরেই এই পূজা হয়।
সন্ধ্যার সময় মেয়েরা পূজা করে; যথাসাধ্য প্রসাদ জোগাড় করে। শুধুগান আর গানের মাধ্যমেই
হয় পূজা। আবার এক পাড়ার সঙ্গে অন্য পাড়ার তর্ক-বিতর্ক চলে এই গানের মাধ্যমে। এই রকম
একটি গান হল –
‘আমদের ভাদু গাধাই গেলে
জোড়া শাঁখ বাজে লো।
তোদের ভাদু গাধাই গেলে,
জোড়া কুকুর ভুকে লো।
আমদের ভাদু মুড়ি ভাজলে
শাঁখা ঝলমল করে লো
তোদের ভাদু মুড়ি ভাজলে
হাত পুড়ে মরে লো।।'
(সংগ্রহঃ কুলবারা গিরি – নেতুরা)
শুধু এটাই
নয়, (ভাদুকে দেখতে এসেছে বরের ঘর থেকে) এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে-
‘ভাদু দেখতে এলি তোরা
ধরলি গো চালের বাতা
চালে ছিল দুধিয়া খরিস
খেল গো তোদের মাথা।’
(সংগ্রহঃ চারুবালা রাউৎ - নেতুরা)
আবার সারা
মাস ধরে পূজা করার পর মাসের শেষে বিসর্জন দিতে নিয়ে যায় গ্রামের পার্শ্ববর্তী একটি
খালে। খালের প্রতিটি ঘাটে বিভিন্ন দল, বিভিন্ন গানের সমারোহ, কেউ কেউ গাইত-
‘জল জল করিস ভাদু
জল তোর কে আছে?
অন্তরে ভাবিয়া দেখো
জলের শ্বশুর ঘর আছে।’
(সংগ্রহঃ কানন বালা ভুঁই,
নেতুরা)
অর্থাৎ
এখানে ভাদুকে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে যে শুধু জল জল করিস, জলে তোর কে আছে? তার উত্তরে ভাদু
বলছে অন্তরে ভেবে দেখো, জলে আমার শ্বশুর ঘর আছে।
No comments