বাঁকুড়া জেলার ভাদু পূজা ও ভাদু গান - সজলকান্তি মণ্ডল
বাঁকুড়া জেলার ভাদু পূজা ও ভাদু গান
সজলকান্তি মণ্ডল
ভাদু বাঁকুড়া
জেলার একটি বিশেষ লৌকিক দেবী। এই দেবীর পূজা ভাদ্র মাসে হয়ে থাকে। এই দেবীর মূর্তি
নির্মাণ করা হয়। খড়, মাটি, রঙ ইত্যাদি বাহ্যিক উপকরণ ছাড়াও অন্তরের আবেগ ও সংস্কার
মিশ্রিত করে কারিগরেরা দক্ষ হাতে এই দেবীর মূর্তি তৈরি করেন।
ভাদু গান
এক বিশেষ জনপ্রিয় লোকসঙ্গীত। ভাদু সম্পর্কিত গানই হল ভাদুগান। তবে ভাদু গানের বিষয়ের
মধ্যে নানা সামাজিক বিষয় তথা ভাবও অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে। আমি গ্রামে বাস করি। আমার
গ্রাম তেমন একটা উন্নত গ্রাম যদিও নয় তবুও এই গ্রামে ভাদুপূজা ও ভাদুগানের প্রচলন আছে।
আমার মৌলাশোল গ্রাম বাঁকুড়া জেলার খাতড়া মহকুমার অন্তর্গত। আমার মৌলাশোল গ্রাম ছাড়াও
পার্শ্ববর্তী গ্রাম লুড়কা, শিরষা প্রভৃতি গ্রামেও এই পূজার প্রচলন দেখা যায়। আমার অভিজ্ঞতা
থেকে বলা যেতে পারে অন্যান্য গ্রামের তুলনায় আমার গ্রামের মেয়েরা বেশ ভালোভাবে ভাদুপূজা
ও ভাদুগানের অনুষ্ঠানটি করে থাকে। আমাদের সমাজে প্রচলিত লোকসংস্কৃতির মধ্যেও ভাদুপূজা
ও ভাদুগান অন্যতম আকর্ষণীয় সংস্কৃতি।
গান তো
সবাই ভালবাসে। গান ভালবাসে না এমন মানুষ জগতে বিরল। মানুষের মধ্যে যখন আনন্দের বিকাশ
ঘটে তখনই মানুষ গান গায়। এই ভাদু পূজা উপলক্ষে মানুষের মনে একটা আনন্দের জোয়ার আসে।
ফলে তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে। মৌলাশোল গ্রামের বাসিন্দা সুস্মিতা মণ্ডলের
কাছ থেকে সংগৃহীত ভাদু গানের কয়েকটি এখানে উল্লেখ করা হল।
দুজনেতে ফুটাই গুঁড়ি সকালে বসি পাট করে।
তালের পিঠা করে
ভাদুধনকে খাওয়াবো গো আমি তরে
তালের পিঠা করে।
তালের পিঠা বড্ড মিঠে গো দেখলে জিভে জল আসে
ঠাকুরপোকে দেনা ডেকে গো করবে পিঠে চট করে।
(২) ভাদু মাকে আনতে যাব লো চন্দন কাঠের চৌডলে
যদি ভাদু দয়া করে রাখব সোনার মন্দিরে।
এখানে
আর একটি ভাদু গানের উল্লেখ করা হচ্ছে – যেখানে বিবাহ নামক সামাজিক অনুষ্ঠানটির কথা
উল্লিখিত হয়েছে। আর এই প্রসঙ্গে পণপ্রথার কথাটিও এসে গেছে। -
ভাদুধনে সাজাব গো কি দিয়ে।
বিনা পণের জামাই আমার গো গরিব ঘরের সৎ ছেলে
ছেলে বেচা কেনার দিনে এমন ছেলে কম মেলে।
টাকা কড়ি গয়নাগাঁটি গো চায়নি ওরা মোটে
শাঁখা সিঁদুর আলতা দিয়ে সাজাব ভাদু ধনে
লেখাপড়া শিখলে ভাদু গো সাক্ষরতার স্কুলে
আত্মনির্ভরতার শিক্ষা যায়নি যে বিফলে।
গুরুজনে সম্মান দিয়ে গো মান রাখো শ্বশুরকুলে
কুলের লক্ষ্মী হয়ে ভাদু গো ভালবাসো সকলে।
স্বামী ধনে ধনী হয়ে গো সুখি হও পতি নিয়ে।
No comments