Header Ads


 

কালুয়া ষাঁড়ের পূজা - গৌতম মাহাত

 



কালুয়া ষাঁড়ের পূজা
গৌতম মাহাত

       পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার (বর্তমানে ঝাড়গ্রাম জেলা) ঝাড়গ্রাম মহকুমার ১০ নম্বর অঞ্চলের অন্তর্গত কয়েকটি গ্রামের (দুধকুণ্ডি, কলসিভাঙ্গা, বাদিনা প্রভৃতি) মধ্যে ‘কালুয়া ষাঁড়ে’র পূজা সীমাবদ্ধ। প্রতি বছর পৌষ সংক্রান্তির কয়েকদিন পর এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। ‘কালুয়া ষাঁড়’ এই নামকরণের উৎসমূল হিসেবে কেলেঘাই নদীর নামোল্লেখ করা যেতে পারে। জনশ্রুতি এই যে কেলেঘাই নদীর উৎসস্থল হিসেবে এই পূজা বহু বছর ধরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। কালুয়া ষাঁড় যদিও পুরুষ দেবতা বলে আমাদের কাছে মনে হতে পারে, কিন্তু স্থানীয় অধিবাসীদের কাছে তা দেবী হিসেবেই গৃহীত। পূজার বলিদানের সময় উচ্চারিত ‘লে মা কালিন্দী’র মধ্যে দিয়ে দেবী নামের স্বপক্ষে যুক্তি দেখানো যেতে পারে। আরও মনে করা হয়,  ‘মা গুপ্তমনি’, ‘মা জয়ন্তী’ ও ‘মা কালিন্দী’ – এই তিন দেবী আসলে তিন বোন। চতুর্দিকে ধান্যক্ষেত্র ও তার মাঝে একটি প্রাচীন বটগাছের তলায় একটি প্রস্তর খণ্ডকে দেবীত্বে আরোপ করে কালুয়া ষাঁড়ের পূজা অনুষ্ঠিত হয়। সেই উপলক্ষে এখানে মেলাও বসে। মাত্র দু-তিন ঘণ্টার এই মেলাতে যথেষ্ট লোক সমাগম লক্ষ্য করা যায়। দর্শনার্থীদের মধ্যে অনেকে মানত করে, অনেকে দেবীর উদ্দেশ্যে প্রসাদ নিবেদন করে থাকে।

       বহু যুগ ধরে চলে আসা এই কালুয়া ষাঁড়ের পূজা উৎসব সেখানকার স্থানীয় অধিবাসীদের কাছে এক বিশেষ আকর্ষণ। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে উচ্চকোটির ব্রাহ্মণের পরিবর্তে অন্ত্যজ শ্রেণীর লোধা সম্প্রদায়ের পূজারীর প্রাধান্য রয়েছে। তবে সমাজের সব শ্রেণীর মানুষই এই পূজা প্রাঙ্গণে প্রবেশাধিকার পেয়ে থাকে। আর যদিও বা কালিন্দীকে অন্ত্যজ শ্রেণীর দেবী বলে স্বীকার করা হয়, তার পরেও সমাজের উঁচুতলার মানুষদের মত নিচু শ্রেণীর লোকেদের সামাজিক অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার প্রয়াসও অনুমান করা কঠিন নয়। সব শেষে বলা যায়, লোকসংস্কৃতির বৈশিষ্ট্যের মধ্যে যদি ঐতিহ্যাশ্রয়ী ও আঞ্চলিকতার মতো ধর্ম দুটি স্থান পায় তবে কালুয়া ষাঁড়ের পূজার কথা স্মরণ করা যেতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.