সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়
তোকে আজ একটি গল্প বলি শোন। এটি একটি গাছের গল্প। সে বেচারা যখন খাঁ খাঁ ফাঁকা মাঠের মধ্যে এক বড় হয়ে বেড়ে উঠতে চাইল – তখন কেউ কেউ তাকে অনেক ঠাট্টা তামাশা করলো। তবুও সে আপন মনেই বেড়ে উঠতে থাকলো। তার ছায়ার শীতলতা অনেকেই গ্রহণ করতে থাকলো। উপকারটুকু নিয়ে গাছের গায়ে এলোমেলো অক্ষর এঁকে দিয়ে চলে গেলো কেউ কেউ। আর এলো না। পাতার সবুজ বাহার দেখে অশান্ত বাতাস এলো তার ঝড়ের প্রবল ঝাঁকুনিসহ। ভঙ্গ হলো তার শতাব্দীর ধ্যান। চোখ মেলে চেয়ে দেখলো যখন, তখন তো সে অনেক ক্ষত ও ক্ষতির শিকার হয়ে গেছে। সময়ের স্রোতে সেই ক্ষত শুশ্রূষা পেতে পেতে যখন প্রায় শুকিয়ে এসেছে – তখনই এই কিছুদিন আগে তার বেদনার ওয়েবসাইট ক্লিক করতে লাগলো একজন।তার প্রথম পরিচয় – কাঠুরিয়া সে। দারিদ্র্যের
নির্মম কুঠার তার হাতে। সুতীব্র আঘাত সেই কুঠারের সাহায্যে হানতে ব্যস্ত এখন সে।
অসহ্য যন্ত্রনায় গাছটি রোজ রাতে কাঁদে। সকাল হলেই ব্যথাভরা চোখে মুখে ভোরের
সুর্যালোকের শিশিরের জল ছিটিয়ে একটা হাসি ঝুলিয়ে বারান্দায় সবাইকে আশ্বস্ত করতে
চায়। কাঠুরিয়াও আসে। হাসতে হাসতে কুঠারের কোপ মারে। তারপর যখন ক্লান্ত – ক্লান্ত হয়ে পড়ে – তখন – তখন – আশ্চর্য হলেও সত্য – সে সেই গাছের ছায়ায় বসে দু’দণ্ড জিরিয়ে নেয়। সবাই আমার কাছে জানতে চায় – আচ্ছা গাছটি ভেঙ্গে পড়ে না কেন? কিংবা ঐ কাঠুরিয়ার ওপর থেকে ছায়াটুকুও তো সরিয়ে
নিতে পারত! কিন্তু তা সে করে না কেন? আমি চুপ করে থাকি। কারণ আমি তো জানি, সে অন্যের
সেবার জন্যই উদ্গত হয়েছে।
আঘাতকারীকেই
আরও বেশি করে শান্তির ছায়া-বারি সিঞ্চনের জন্যে তার অঞ্জলি উদ্যত হয়ে আছে, থাকবে – যতদিন তার চোখের কোলে কালি আর অশ্রু একাকার হয়ে আছে।
প্রথম বর্ষ প্রথম সংখ্যা এপ্রিল ২০০৩
No comments