বিদ্যাসাগরের প্রতি : পরিতোষ মাহাত

 

বিদ্যাসাগরের প্রতি

পরিতোষ মাহাত

 

ভেড়াকে নেউগড়াঞি ঘড়া বনা যায় নাই-

বরুং ঘড়াকে নেউগড়ালে

ভেড়া হঞি যাবার চান্স থাকে!

তার লাগেঁই বলি কীঃ

বেশিক্কে বাশি তেরিমেরি করেঁ লাভ নাই

যে দেখুৎ কুঢ়ি,

তিৎকিয়ে তিৎকালেও যে গ্যারাহ্য করে নাই

খ্যাঁচরাঞি অকে চানকি করা যায়?

কাজিকে বাশি খ্যাঁচরা-খ্যাঁচরি কইরলে –

পাজি হঞ যাবার চান্স থাকে!

পেঁদা বইলচ্ছি? সইৎ নায় ত কী?

কানশালে আঁড়রালেও কেউ শুইনছে কি?

গটা আনসা হঞে গেল –

মেদনীপুর নকি সাক্ষর হঞে গেল।

ভাল কথ্তহা।আঁধার কালর মইধ্যে আলর কথা।

বিদ্যাসাগর আপনি ত এই স্বপুনেই দেখথেন,

সেই স্বপুন ত সাত্থক হঞ গেল।

কিন্তুক নিজ কানে ক্যানে শুনলি সেই ডায়লগটা?

‘বিদ্যাসাগরের মেদনীপুর, ভাকুত্যালে ভরপুর,

বই শিলেট চুলহায় পুড়’!

কিসের লাগেঁ ক্যানে তিতিক্ষায় বইল্ল লকে,

যেদগে দরকার সেদগে নায় মুহাঞি

ভাশুরের সঁগে যাচাঞি ছুয়ায়।

বুঝলি হে সাঁঘাত,

বইল্লে বলে চুনু থোতনায় ভুখেল বাত!

স্বচইখে ক্যানে দেখলি ভালা

বুঢ়াপঢ়ার মূল্যায়ন-পত্রগিলায় উত্তর লিইখছে

গঠ গঠ পেরাইমারি ইস্কুলের ছানাপুনা?

স্বচইখে দেখা, লহে শুনা, লহে গাঁথাগুণা,

লহে আনসাট্টা কহনী বুনা।

বিদ্যাসাগর! দোষ দিব আর কাকে?

ইছড়িং আর ডাকুস ত জরি-জবরায়েই থাকে!

হামি ঝাণ্ডা উড়াঞি চলি

বক্তৃতা দিই, মুহে বড় বড় ‘বলি’ বলি-

‘বিদ্যাসাগরের মেদিনীপুর

নিরক্ষরতা করবো দূর।”

আর ইদগে হামার বেটা

অ – আ পইড়থ্য যেটা

অকে পাঠাই ইংলিশ মিডিয়ামে

নাইহলে যে বেচরি কম পড়েঁ যায় দামে!

হায় বিদ্যাসাগর শুইনছেন ত?

স্বপুনের জাল বুইনছেন ত?

এই ত বাংলা!

চাইর‍ দিগেল্লে তাইল মাইরছ্যে হিন্দীগান।

জহরাঞিছে। পইচবার কথা ছিল –

কিন্তুক কই, পইচল নাই ত কান?

কাওয়ায় কি আর কুইলির ডাক ডাকে?

বলছি ত, যাদের কিছু করার ছিল

অরহা ডুবেছে অথই পচলা পাঁকে,

নাই ত ত্যাল দিঞছে নাখে।

ভেড়াকে নেউগড়াঞি ঘড়া বনা যায় নাই-

বরুং ঘড়াকে নেউগড়ালে ভেড়া হঞি যাবার চান্স থাকে!

         বিটি ছা-গিলার লিখাপঢ়ির লাগেঁ

অনেক করেঁছিলেন, হঁটরে হঁটরে রাইৎ জাগেঁ।

আইজ বিটি ছা-গিলাকে দেখছিই ত নিজের চইখে

এক সঁগে পাউড়ি বাঢ়াঞিছে,

আগদহলিও ত হছে কেউ কেউ।

কিন্তুক…

আধেকগিলা ত আইজও ছাগল বাগালি কইরছে

চার আনি বয়সেই

ট্যাঁহাছানা কলে কাঁখে মানুষ কইরছে।

খাটেঞ খাটেঞ মরদগিলার

জাহান কাইলা হঞে গেল

কিন্তুক কই অদের দুখের মইলা কই গেল?

আধপেটা খাঞে খাইটছে খইড়কা সুরু গতরে

মরণের পাঘা আঁট হছে সরেঁ সরেঁ।

হাউলসা হাউলসি হছে ঘরে ঘরে

কে লিলাঞ দিলেক বাবু কার এত হাস?

        ঘড়াগিলাকে ভেড়া বনাঞ ঘড়া ডেঁহগেঞ খাছ ঘাঁস?

        কে লিলাঞ দিলেক বাবু কার এত হাস?

        ঘড়াগিলাকে ভেড়া বনাঞ ঘড়া ডেঁহগে কাটঅ ঘাঁস?

 

বিদ্যাসাগর! পাঁচ কুড়ি পাঁচ বছর হঁঞে গেল

আপনি চল্যে গেছেন।

গেছেন নকি ভগবানেই জানেন!

        বিদ্যাসাগর; আপনি কি আর একবার নাই আসভেন?

সাগর নাই হোক একটা হড়হইড়া লদী হঞে?

পানি তঘরেঁ রহৈলে ভুঁই প্যাসলিবারেই কথা,

তা সে যতই শুখনা হোক।

তবে সইৎ, দলখি হয় নাই।

কেউ কেউ পইড়া ডাঙায় দলখি কইরতে গেছল

কিন্তুক লাভ হয় নাই;

পানি ঘ্যাঁটলায় হয় লেওয়া লিয়েঁছে, নাইত,

শুধু পেঁখাল মাছের লেখেন

কাদায় সামহায় আরামসে আছে।

তাই ত জিগাস  করি বিদ্যাসাগর,

হবকা বহি কবু নামভেক নাই?

আঁঝলা জলে ত অঁজরা আখলান যায় নাই

পাখলাও যাবেক নাই,

একটা হড়হইড়া লদী দরকার –

একটা হড়হইড়া লদী।